উত্তর আফ্রিকার দেশ লিবিয়ার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় কুফরা শহরের মরুভূমিতে আরেকটি গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে। ওই গণকবর থেকে কমপক্ষে ৩০ অভিবাসী ও শরণার্থীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
এর আগে একদিন আগেই একই শহরের মরুভূমিতে একটি গণকবরের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল। ওই গণকবর থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল কমপক্ষে ১৯ অভিবাসীর মরদেহ। রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, লিবীয় কর্তৃপক্ষ সর্বশেষ ট্র্যাজেডিতে দেশটির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় মরুভূমিতে দুটি গণকবর থেকে প্রায় ৫০ টি মৃতদেহ উদ্ধার করেছে। নিরাপত্তা অধিদপ্তর রোববার এক বিবৃতিতে বলেছে, গত শুক্রবার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় শহর কুফরার একটি খামারে পাওয়া একটি গণকবরে ১৯টি মৃতদেহ রয়েছে। দেহাবশেষ ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
কুফরার নিরাপত্তা চেম্বারের প্রধান মোহাম্মদ আল-ফাদিল বলেছেন, কর্তৃপক্ষ একটি অভিবাসী আটক কেন্দ্রে অভিযান চালানোর পর শহরে কমপক্ষে ৩০টি মৃতদেহসহ দ্বিতীয় আরেকটি গণকবরও পাওয়া গেছে। তিনি বলেছেন, বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের তথ্য অনুসারে, প্রায় ৭০ জন লোককে ওই স্থানে কবর দেওয়া হয়েছিল এবং কর্তৃপক্ষ এখনও এলাকাটি অনুসন্ধান করছে।
পূর্ব ও দক্ষিণ লিবিয়ার অভিবাসী ও উদ্বাস্তুদের সাহায্যকারী দাতব্য সংস্থা আল-আবরিন বলেছে, গণকবরে পাওয়া কিছু লোককে কবর দেওয়ার আগে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল।
আশ্রয়প্রার্থীদের মৃতদেহ সম্বলিত গণকবরগুলো এর আগেও লিবিয়ায় আবিষ্কৃত হয়েছে। এই দেশটি আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্য থেকে ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টাকারী অভিবাসীদের প্রধান ট্রানজিট পয়েন্ট। গত বছর লিবীয় কর্তৃপক্ষ রাজধানী ত্রিপোলির দক্ষিণে শুয়ারিফ অঞ্চলে অন্তত ৬৫ অভিবাসীর মৃতদেহ উদ্ধার করেছিল।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর সমর্থনপুষ্ট এক গণঅভ্যূত্থানে লিবিয়ার দীর্ঘদিনের শাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফি উৎখাত হন। তখন থেকে দারিদ্র্য ও সংঘাত থেকে পালিয়ে ইউরোপে উন্নত জীবনের আশায় আফ্রিকা, এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের হাজার হাজার মানুষ প্রায়ই ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করেন।
বর্তমানে অভিবাসীদের ইউরোপে যাওয়ার অন্যতম প্রস্থান পয়েন্ট হয়ে উঠছে লিবিয়া। দেশটি নজিরবিহীন অভিবাসন সংকটের মুখোমুখি হয়েছে। ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে লিবিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন, কুফরা শহরে একটি গ্যাং আছে; যার সদস্যরা অভিবাসীদের ব্যক্তি স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করেছিলেন। তাদের সঙ্গে এই গ্যাংয়ের সদস্যরা নিষ্ঠুর নির্যাতন ও অমানবিক আচরণ করেন।
কী কারণে প্রাণহানি ঘটেছে তা জানতে মরুভূমিতে পাওয়া অভিবাসীদের মরদেহের ফরেনসিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। সেখান থেকে জীবিত উদ্ধার প্রত্যক্ষদর্শী অভিবাসীদের বক্তব্য নথিভুক্ত করার কাজ শুরু করেছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।