Tuesday, April 29, 2025

সিন্ধু পানিচুক্তি: অধিকার রক্ষায় সব ধরনের পদক্ষেপ নেবে পাকিস্তান

আরও পড়ুন

সিন্ধু পানি বণ্টন চুক্তির আওতায় নিজেদের প্রাপ্য পানির অংশ নিশ্চিত করতে সব ধরনের উপযুক্ত পদক্ষেপ নেবে পাকিস্তান—এমন ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। সোমবার এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে ভারতের সাম্প্রতিক পদক্ষেপের পর পাকিস্তানের কৌশল নিয়ে আলোচনা করেছে ইসলামাবাদ।

মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেওয়া এক সরকারি বিবৃতিতে জানানো হয়, বৈঠকে আইন ও বিচারমন্ত্রী, পানিসম্পদ মন্ত্রী, অ্যাটর্নি জেনারেল, জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এবং কারিগরি বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন।

গত ২২ এপ্রিল ভারতের নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁও এলাকায় পর্যটকদের ওপর হামলার ঘটনার পর ভারত ১৯৬০ সালের সিন্ধু পানি বণ্টন চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা দেয়। এ প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের কৌশল নির্ধারণে এ বৈঠক আহ্বান করা হয়।

ভারতের এই সিদ্ধান্তকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপের অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। হামলার অভিযোগ সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে ইসলামাবাদ জানিয়েছে, তারা একটি নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের অংশ হতে প্রস্তুত।

যদিও সাম্প্রতিক উত্তেজনা সামরিক সংঘাতে রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, তবে সবচেয়ে বড় উদ্বেগ এখন সিন্ধু পানিচুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে। উল্লেখ্য, বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত এ চুক্তি তিনটি পূর্বাঞ্চলীয় নদী (রাভি, বিয়াস ও শতদ্রু) ভারতের জন্য এবং তিনটি পশ্চিমাঞ্চলীয় নদী (সিন্ধু, ঝিলম ও চেনাব) পাকিস্তানের জন্য বরাদ্দ করে।

আরও পড়ুনঃ  ইন্টারনেটের মূল্য-কলরেট কমানোর দাবি

চুক্তিটি অতীতে যুদ্ধ ও সংকটকালীন সময়েও বহাল ছিল, কিন্তু এবারই প্রথম ভারত পানি নিয়ে চাপ সৃষ্টি করার পদক্ষেপ নিয়েছে। ইসলামাবাদ স্পষ্টভাবে সতর্ক করেছে, পাকিস্তানের প্রাপ্য পানি আটকানো বা বাঁকিয়ে দেওয়ার যেকোনো প্রচেষ্টা যুদ্ধ ঘোষণার শামিল হবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার বলেন, পাকিস্তান তার পানি অধিকার রক্ষায় সব ধরনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। তিনি ভারতের একতরফা ও বেআইনি পদক্ষেপকে আন্তর্জাতিক আইন, আন্তঃরাষ্ট্র সম্পর্কের প্রথা এবং চুক্তির নিজস্ব বিধানগুলোর লঙ্ঘন হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

তিনি বলেন, সিন্ধুর পানি বণ্টন চুক্তি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এর মর্যাদা রক্ষা করা আবশ্যক।

পাকিস্তানের ২৪ কোটির বেশি মানুষের জন্য সিন্ধু নদী জীবনরক্ষাকারী বলে মন্তব্য করেন দার। ভারতের পানি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টাকে তিনি নিন্দা জানান।

তিনি আরও বলেন, পাকিস্তান চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নের পক্ষে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে, যাতে দেশের পানি অধিকার ও জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত হয়।

আরও পড়ুনঃ  মাস্টার্স শেষে হল ছেড়ে দিচ্ছেন ঢাবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি

চুক্তি অনুযায়ী, ভারত মোট পানির প্রায় ২০ শতাংশ পায়, যার ৯৩-৯৪ শতাংশ ব্যবহার করে। বাকি পানি পাকিস্তানে প্রবাহিত হয়। চুক্তিতে একতরফাভাবে প্রত্যাহারের কোনো বিধান নেই। সিন্ধু পানি বণ্টন চুক্তির ১২ নম্বর অনুচ্ছেদে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, এই চুক্তির বিধানসমূহ দুই দেশের মধ্যে যথাযথভাবে অনুমোদিত নতুন চুক্তি দ্বারা বাতিল না হওয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।

আন্তর্জাতিক আইনের (বিশেষত ১৯৬৯ সালের ‘ভিয়েনা কনভেনশন অন দ্য ল’ অব ট্রিটিজ’) অধীনে, কোনো দেশ একতরফাভাবে কোনো চুক্তি বাতিল করতে পারে না, যদি না উভয় পক্ষ সম্মত হয় বা চুক্তিতে তা অনুমোদিত হয়।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বিশাল পরিসরের দীর্ঘমেয়াদি অবকাঠামো প্রকল্প ছাড়া ভারত বাস্তবে চুক্তি স্থগিত করতে পারবে না।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, ভারতের এই সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতে চীনকেও ব্রহ্মপুত্র নদে একই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রবণতা তৈরি করতে পারে, যা ভারতের জন্য বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।

তারা আরও বলছেন, সিন্ধু পানি বণ্টন চুক্তির স্থগিতাদেশ পাকিস্তানের পানিসুরক্ষা, কৃষি, খাদ্য ও পানীয় জলের সরবরাহে মারাত্মক হুমকি তৈরি করবে, যা ইসলামাবাদকে জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) এবং বিশ্বব্যাংকের মাধ্যমে আইনি ও কূটনৈতিক লড়াইয়ে যেতে বাধ্য করতে পারে।

আরও পড়ুনঃ  মারা গেছেন সারজিস আলমের দাদা

পাকিস্তান জাতিসংঘ সনদের ৩৫ অনুচ্ছেদের আওতায় নিরাপত্তা পরিষদে বিষয়টি উত্থাপন করতে পারে, যেখানে কোনো দেশ যদি মনে করে যে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে, তাহলে তা পরিষদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে।

এ নিয়ে পাকিস্তান নেপাল, বাংলাদেশ ও ভুটানের মতো অন্য নিম্ন অববাহিকার দেশগুলোর সঙ্গে যৌথ কূটনৈতিক প্রচেষ্টা গড়ে তুলতেও পারে। কর্মকর্তারা মনে করছেন, সিন্ধু পানি বণ্টন চুক্তি দক্ষিণ এশিয়ায় স্থিতিশীলতার প্রধান ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে; এর বিঘ্ন ঘটলে তা পরিবেশগত বিপর্যয় ও কোটি মানুষের জীবন-জীবিকার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

পাকিস্তান ইতোমধ্যে সতর্ক করেছে, একতরফাভাবে চুক্তি স্থগিত করলে ১৯৭২ সালের শিমলা চুক্তি, ১৯৪৯ সালের করাচি চুক্তি এবং গুরুত্বপূর্ণ আত্মবিশ্বাস তৈরির ব্যবস্থাগুলো ভেঙে যেতে পারে, যা দুই দেশের মধ্যে কাঠামোবদ্ধ কূটনৈতিক সম্পর্ক ভেঙে পড়ার ঝুঁকি তৈরি করবে।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ