জাতীয় নির্বাচন, সংস্কার এবং ফ্যাসিস্টদের বিচারসহ নানা ইস্যুতে ১২ দলীয় জোট ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটি। শনিবার পৃথকভাবেই এই বৈঠক হয়। এতে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে একমত হয়েছেন নেতারা। তাদের দাবি, ডিসেম্বরের মধ্যেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নির্বাচন করা সম্ভব। ১৬ বছর ধরে দেশের মানুষ ভোট দিতে পারেনি। এই মুহূর্তে জনগণ একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রত্যাশা করে।
এজন্য দ্রুততম সময়ে ন্যূনতম প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে বর্তমান সরকারকে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন দিতে হবে। তার আগে নির্বাচনি রোপম্যাপ চান দল ও জোটের শীর্ষনেতারা। তারা এ-ও বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ফসল। রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থনের সরকার। তাই নির্বাচনের দাবিতে এখনই আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা দেখছেন না বৈঠকে অংশ নেওয়া দলগুলো।
লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠকে অংশ নেওয়া নেতারা বলেন, দেশে বর্তমানে যে পরিস্থিতি তাতে একটা নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার ন্যূনতম সংস্কারগুলো শেষ করে নির্বাচন দিলে, পরে নির্বাচিত সরকার বড় বড় সংস্কার কার্যক্রমগুলো চলমান রাখবে। এজন্য বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো মনে করে, চলতি বছরের ডিসেম্বরেই নির্বাচনের উপযুক্ত সময়। বিলম্ব হলে ফ্যাসিস্টরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। দেশ নিয়ে দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্র হতে পারে। তাই সবাই একমত চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। এ ছাড়া ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ, তাদের দোসর এবং মানবতাবিরোধী অপরাধে বিচার হতে হবে।
লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, বৈঠকে অনেকগুলো বিষয়ে একমত হয়েছে বিএনপি। সরকার ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলেছে। কিন্তু আমরা চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন চাই। ফ্যাসিস্ট দল আওয়ামী লীগের গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হওয়া উচিত বলে মনে করে সবাই।
তিনি বলেন, নির্বাচনের দাবিতে এখনই আন্দোলনের প্রয়োজন দেখছে না বিএনপি। কারণ এই সরকারকে তো আমরা সমর্থন দিয়ে বসিয়েছি।
লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক প্রসঙ্গে নজরুল ইসলাম খান বলেন, এই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আমরা বহু বছর ধরে একসঙ্গেই কাজ করছি। কখনো জোটবদ্ধভাবে, কখনো যুগপৎভাবে। কাজেই রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ আমরা। আজকে আমরা ১২ দলীয় জোটের শীর্ষনেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলাম। কয়েকদিন আগে প্রধান উপদেষ্টা এবং তার সহকর্মীদের সঙ্গে বিএনপির একটা আলোচনা হয়েছে। সেই আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়েই আমরা আজকে মতবিনিময় করেছি। কারণ সহযোগী হিসাবে তাদের জানার অধিকার আছে, আমাদেরও দায়িত্ব তাদের জানানো। আমরা সে বিষয়গুলোটা আলোচনা করেছি এবং তার প্রেক্ষিতে অনেক বিষয়েই আমরা একমত হয়েছি যে, আমাদের কী করণীয়। এ ব্যাপারে আরও রাজনৈতিক জোট এবং দলের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হবে। সব মিলিয়ে আমরা হয়তো এক সময় বিএনপির পক্ষ থেকে বলব।
বৈঠকে নির্বাচনের বিষয়ে কী ধরনের সিদ্ধান্ত হয়েছে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সবেমাত্র আমাদের আলোচনা শুরু হয়েছে। বাকি জোট ও যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শেষে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
১২ দলীয় জোটের শীর্ষনেতা ও জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, আমরা একটা বিষয় লক্ষ করেছি যে, প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তব্যে অটল রয়েছেন। কিন্তু আমাদের দাবি হচ্ছে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। দেশবাসীর প্রত্যাশাও একই।
লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠকে বিএনপির পক্ষে আরও উপস্থিত ছিলেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান। ১২ দলীয় জোটের পক্ষে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম, বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, জমিয়তে উলামায় ইসলামের মহাসচিব মুফতি গোলাম মুহিউদ্দিন ইকরাম, বিকল্পধারা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বেপারি, জাগপার সহসভাপতি রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান লায়ন মো. ফারুক রহমান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান শামসুদ্দিন পারভেজ, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মওলানা আবদুল করিম, বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টির মহাসচিব আবুল কাশেম, পিএনপির চেয়ারম্যান ফিরোজ মো. লিটন এবং নয়া গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান। এ ছাড়া এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদের নেতৃত্বে ৬ সদস্যের প্রতিনিধিদল বৈঠকে অংশ নেন।