ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে উত্তেজনাপূর্ণ পরিবেশের মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে নতুন ছাত্রসংগঠন ‘বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ’। এই সংগঠনের আহ্বায়ক হিসেবে আবু বাকের মজুমদার এবং সদস্যসচিব হিসেবে জাহিদ আহসান দায়িত্ব পেয়েছেন। তবে সংগঠনের আত্মপ্রকাশের আগে ও পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে সংগঠনটির […]
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে উত্তেজনাপূর্ণ পরিবেশের মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে নতুন ছাত্রসংগঠন ‘বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ’। এই সংগঠনের আহ্বায়ক হিসেবে আবু বাকের মজুমদার এবং সদস্যসচিব হিসেবে জাহিদ আহসান দায়িত্ব পেয়েছেন। তবে সংগঠনের আত্মপ্রকাশের আগে ও পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে সংগঠনটির আত্মপ্রকাশ করা হয়। তবে ঘোষণার আগ মুহূর্তে এবং ঘোষণার পরেও মধুর ক্যান্টিনের পরিবেশ বেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বিশেষ করে, রিফাত রশিদকে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা নিয়ে বেশ কিছু শিক্ষার্থীর আপত্তি থাকায় কয়েক দফা বিতর্ক এবং হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
সংগঠনের মুখ্য সংগঠক হাসিব আল ইসলাম উত্তেজনাকর পরিস্থিতিকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন। তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় কমিটির চারজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তির ব্যাপারে সবাই একমত হয়েছেন। তবে মধুর ক্যান্টিনে যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল, তা প্রমাণ করে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আগ্রহ রয়েছে এবং তাদের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটবে নতুন এই সংগঠনের মাধ্যমে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করেছি, শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যেও নতুন সংগঠনের নেতৃত্ব নিয়ে প্রতিযোগিতা দেখা গেছে। এটি গণতান্ত্রিক চর্চারই অংশ। তবে যখন কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হলো, তখন উত্তেজনা স্বাভাবিক হয়ে আসে।’
গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদে কোনো নির্দিষ্ট সিন্ডিকেট থাকবে না বলে জানিয়েছেন হাসিব আল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক কমিটি গঠনের ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে আমরা সমগ্র দেশের শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করতে চাই। খুব শিগগিরই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংগঠনের কমিটি ঘোষণা করা হবে।’
তবে সংগঠনের আত্মপ্রকাশের সময় হাতাহাতি এবং উত্তেজনার বিষয়টিও সামনে এসেছে। এ বিষয়ে হাসিব বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণতান্ত্রিক প্রতিযোগিতা থাকতে পারে। তবে কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি। কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে থাকে, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সংগঠনটির আত্মপ্রকাশকে কেন্দ্র করে ছাত্র রাজনীতির নতুন সমীকরণ তৈরি হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বিশেষ করে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে গঠিত এই সংগঠন আগামী দিনে শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষায় কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে, তা নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে। অন্যদিকে, নতুন নেতৃত্ব কতটা গ্রহণযোগ্য হবে এবং এটি আদতে কতটা গণতান্ত্রিকভাবে পরিচালিত হবে, সেটিও এখন শিক্ষার্থী মহলে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে, সংগঠনের আত্মপ্রকাশের পর থেকেই বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচনা এবং সমর্থন উভয়ই আসতে শুরু করেছে। অনেকেই বলছেন, এটি একটি স্বতঃস্ফূর্ত ছাত্র আন্দোলনের ফসল এবং এর নেতৃত্ব ছাত্র সমাজের প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব করবে। অন্যদিকে, কিছু মহল দাবি করছে, সংগঠনের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং ক্ষমতার লড়াই আগামীতেও চলতে পারে, যা সংগঠনটির ভবিষ্যৎ কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
সব মিলিয়ে, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের আত্মপ্রকাশ দেশের ছাত্র রাজনীতিতে একটি নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে মনে করা হচ্ছে। সংগঠনের ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা এবং নেতৃত্বের গুণগত মানই ঠিক করবে এটি কতটা টেকসই হয়ে উঠবে।