ইসলামী ছাত্রশিবির বলেছে, শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাসে ছাত্রদলের মধ্যে ছাত্রলীগের প্রতিচ্ছবি দেখা যাচ্ছে। সারাদেশে চাঁদাবাজি দখলদারির হাতবদল হয়েছে, চলমান আইনশৃঙ্খলা অবনতির সামাল দিতে না পারলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে পদত্যাগের আহ্বান জানান তারা। রোববার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা। এ দিকে ছাত্রশিবিরের মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করায় প্রতিবাদ জানিয়েছে ছাত্রদল।
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম, সেক্রেটারি নূরুল ইসলাম সাদ্দাম, ঢাবি শিবিরের সাবেক সভাপতি সাদিক কায়েমসহ অন্যান্য নেতারা অংশ নেন। সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন ক্যাম্পাসে সংঘর্ষের ঘটনায় ব্যাখ্যাও দিয়েছেন তারা।
ছাত্রদলকে ইঙ্গিত করে জাহিদুল ইসলাম বলেন, ছাত্ররাজনীতি নিয়ে যে জন–আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছিল, তা কিছু ছাত্রসংগঠনের আধিপত্যনীতি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, চাঁদাবাজি, ট্যাগিংয়ের ফলে নষ্ট হচ্ছে। নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ বিতাড়িত হলেও দুর্ভাগ্যজনকভাবে ছাত্রদলকে তাদের পথ অনুসরণ করতে দেখা যাচ্ছে। ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্রদল অন্যান্য ছাত্রসংগঠনকে অন্যায়ভাবে দমনের চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, নিজেরা সন্ত্রাসী কায়দায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে তার দায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ছাত্রশিবিরের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে। যার প্রবক্তা ছিল নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ।
জাহিদুল বলেন, তারা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে ‘শিবির কোপানো জায়েজ আগেও ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে’ এমন বীভৎস ঘোষণা দিচ্ছে। খুলনার শিববাড়ীতে তাদের মিছিলে ‘একটা একটা শিবির ধর, ধইরা ধইরা জবাই কর’ স্লোগান দেওয়া হয়েছে। এমন ভয়ংকর স্লোগান আমরা ছাত্রলীগের মুখে শুনতাম। ছাত্রদলের মধ্যে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের প্রতিচ্ছবি আমরা দেখতে পাচ্ছি।
শিবির সভাপতি বলেন, দেশব্যাপী চাঁদাবাজি, দখলদারি দেখে বোঝার উপায় নেই যে, দেশে কোনো পরিবর্তন হয়েছে। অপরাধীদের হাত বদল হয়েছে ঠিকই, কিন্তু অপরাধ আগের মতোই চলছে। ২২ ফেব্রুয়ারি যশোরে চাঁদা না দেওয়ায় সম্রাট নামের এক মাছা ব্যবসায়ীর চোখ উপড়ে ফেলে ছাত্রদলের সন্ত্রাসীরা। গাজীপুরে মাইকে ঘোষণা দিয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে চাঁদা আদায় করার ঘটনা আপনারা দেখেছেন।
বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণ ও আইনশৃঙ্খলা অবনতির বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শিবির সভাপতি আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলা ফেরাতে না পারলে ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে জাতির কাছে ক্ষমা চান অথবা পদত্যাগ করুন।
তিনি আরও বলেন, জুলাই গণহত্যায় জড়িত ৭২৩ জনকে জামিন দেওয়া হয়েছে, অথচ বিগত ১৫ বছরের করা মামলার আসামিদেরকে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে না। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি এটিএম আজহারুল ইসলামসহ সব মজলুমদের দ্রুত মুক্তির দাবি করছি।
সাম্প্রতিক সময়ে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট), সিলেটে এমসি কলেজ এবং তামীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসায় হামলার ঘটনায় নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন শিবির সভাপতি।
তিনি বলেন, কুয়েটে সাধারণ ছাত্রদের ওপর ছাত্রদল-যুবদলের বহিরাগত সন্ত্রাসীদের প্রকাশ্য দিবালোকে সশস্ত্র হামলা পরিচালনা করে। এতে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী মারাত্মক আহত হয়। কিন্তু ছাত্রদল সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের দায় ছাত্রশিবিরের ওপর চাপিয়ে দেয়।
এমসি কলেজের ঘটনা নিয়ে শিবির সভাপতি বলেন, এমসি কলেজে আনযুমানে তালমীযে ইসলামিয়ার কর্মী মিজানুর রহমান রিয়াদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের হাতাহাতির ঘটে। এতে জাহিদুল ইসলাম হৃদয় ও রিয়াদ নামে দুইজন আহত হয়। এটির দায় ছাত্রদল শিবিরের ওপর চাপায়। পরে কলেজ অধ্যক্ষের বক্তব্যে ছাত্রশিবির যে ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয় তা প্রমাণিত হয়।
শিবির সভাপতি আরও বলেন, তামীরুল মিল্লাত মাদ্রাসায় ছাত্রশিবিরের ওয়ার্ড সভাপতি ফজলে রাব্বি সিফাতকে হত্যার উদ্দেশ্যে ছাত্রদলের সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে জখম করে। আসামিকে ছিনিয়ে নিয়ে ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে বক্তব্য নিতে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা থানার সামনে ‘মব’ তৈরি করার চেষ্টা করে। আমরা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির নিশ্চিত করতে প্রশাসনের কাছে দাবি পেশ করছি। ছাত্রদলকেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
এদিকে মধুর ক্যান্টিনে ছাত্রশিবিরের সংবাদ সম্মেলন করায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ছাত্রদল। দলটির নেতারা মনে করেন, ইসলামি ছাত্রশিবির নানাভাবে মহান মুক্তিযুদ্ধকে ভারতীয় ষড়যন্ত্র বলে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের এবং বীর শহীদদের অবমাননা করছে। মধুর ক্যান্টিনে ছাত্রশিবিরের উপস্থিতি মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে কলঙ্কিত করবে।
রোববার ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের পাঠানো বার্তায় বলা হয়, মধুর ক্যান্টিনের প্রতিষ্ঠাতা স্বত্বাধিকারী মধুসুদন দে ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ পাক হানাদার বাহিনীর হাতে শহীদ হন। স্বাধীনতাবিরোধী সংগঠন জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রসংগঠন ছাত্রশিবিরের মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন শহীদ মধুদার প্রতি এবং তার পরিবারের প্রতি অসম্মানজনক। ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব এবং সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বিবৃতিতে বলেন, অনুতাপ এবং বিবেকবোধ থেকেই ছাত্রশিবির এর মধুর ক্যান্টিনে আসা উচিত নয়।