সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করেছেন সিলেট মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমির। তবে তার বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছেন শিবিরের কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদ সদস্য ও মহানগর সভাপতি।
ফেসবুকে মন্তব্য করার জেরে শিবিরের হামলার শিকার হন বলে অভিযোগ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বাংলাদেশ আঞ্জুমানে আল ইসলাহর এমসি কলেজ শাখার কর্মী মিজানুর রহমান রিয়াদ। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি রাতে কলেজ ছাত্রাবাসের ১ম ব্লকের ১১১ নম্বর কক্ষে শিবিরের কিছু কর্মী তার ওপর হামলা করেন। এ ঘটনা নিয়ে সিলেটসহ সারা দেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
ঘটনাটি নিষ্পত্তি করার জন্য রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সিলেটে আঞ্জুমানে আল ইসলাহ ও জামায়াতের যৌথ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ছাত্রশিবিরের হামলায় দায় স্বীকার করে জামায়াত নেতারা দুঃখ প্রকাশ করেন এবং এ ধরনের ঘটনা আর যেন না ঘটে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান।
বৈঠক থেকে এক ভিডিও বার্তায় সিলেট মহানগর জামায়াতের আমির মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, এমসি কলেজে যে ঘটনা ঘটেছে, সেটির নিন্দা জ্ঞাপন করছি এবং দুঃখ প্রকাশ করছি। বিশেষ করে ফেসবুকের একটি পোস্টকে কেন্দ্র করে সেখানে যে বাড়াবাড়ি হয়েছে, আমাদের দৃষ্টিতে সেখানে ছাত্রশিবিরের কিছু সংখ্যক কর্মী জড়িত। তারা যা করেছে, সেটি অন্যায়ভাবে করেছে। এটি দুঃখজনক।
ভিডিও বার্তায় তিনি আরও বলেন, আমরা পরস্পরই ইসলামি সংগঠন, আমরা দেশ ও জাতির ভালো চাই। আমরা এই দেশে একটি ইসলামি পরিবেশ চাই। রাসুলের আদর্শের আলোকে একটি সুন্দর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হোক, আমাদের উভয় সংগঠনেরই একই উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্য। এই জায়গা থেকে নিজেদের মধ্য থেকে যদি কোনও ভুলত্রুটি বা ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হয় সেখানে ইসলামবিরোধী পক্ষ মূলত উপকৃত হবে। সেই অবস্থায় যদি আর কোনও ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়, আমরা পরস্পর বসে এই বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে মীমাংসার দিকে যাবো।
তিনি বলেন, এমসি কলেজের ঘটনায় আহত শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান রিয়াদ সে যেভাবে আহত হয়েছে আমরা তার প্রতি সহমর্মিতা ও দুঃখ প্রকাশ করছি। তার সুচিকিৎসা নিশ্চিত ও সুস্থতা কামনা করছি। তার পরিবারের প্রতি আমরা সমবেদনা জানাচ্ছি। বিশেষ করে বিগত জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। তাদের উত্তম জাযাহ আল্লাহর পক্ষ থেকে কামনা করছি। যারা আহত রয়েছেন তাদের সুস্থতা কামনা করছি। যারা রক্ত দিয়েছেন তাদের রক্তের দাবি অনুযায়ী আমরা বৈষম্যহীন সুন্দর ও শান্তিময় দেশ ও সমাজ গঠনে উভয় সংগঠন ঐকমত্যভাবে কাজ করবো, এ ব্যাপারে আমরা একমত হয়েছি।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি অ্যাডভোকেট মাওলানা আব্দুর রকিব, জামায়াতে ইসলামীর সিলেট জেলা আমির মাওলানা হাবিবুর রহমান, মাসিক পরওয়ানার সম্পাদক মাওলানা রেদওয়ান আহমদ চৌধুরী ফুলতলী, আল ইসলাহ নেতা মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, বাদেদেওরাইল ফুলতলী কামিল মাদ্রাসার মুহাদ্দিস মাওলানা নজমুল হুদা খান, শ্রমিক ফেডারেশন নেতা লোকমান আহমদ, আল ইসলাহ নেতা মাওলানা জইন উদ্দিন, মাওলানা জিয়াউল ইসলাম মুহিত প্রমুখ।
এদিকে, রবিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমিরের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছেন শিবিরের কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগর সভাপতি শাহীন আহমদ ও মহানগর সেক্রেটারি শহিদুল ইসলাম সাজু।
বিবৃতি দিয়ে তারা বলেন, সিলেটের এমসি কলেজে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে শিক্ষার্থীদের পারস্পরিক বিরোধে হাতাহাতির ঘটনায় কয়েকজন আহত হন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিছু স্থানীয় রাজনৈতিক মহল ফায়দা হাসিল করতে ছাত্রশিবিরের ওপর দায় চাপিয়ে আসছে। রবিবার মহানগর জামায়াতের আমির ফখরুল ইসলামের প্রদত্ত একটি বক্তব্য আমাদের নজরে আসে। আমরা তার এই বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। শিক্ষার্থীদের পারস্পরিক দ্বন্দ্বকে সংঘবদ্ধ অপপ্রচারের মাধ্যমে ছাত্রশিবিরের ওপর দায় দিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা ইতোমধ্যে দেশবাসীর দৃষ্টিগোচর হয়েছে। মহানগর জামায়াতের আমিরও এই অপপ্রচার দ্বারা বিভ্রান্ত হয়েছেন বলে আমরা মনে করছি। অবিলম্বে এই বক্তব্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানাচ্ছি।
ছাত্রশিবিরের বিবৃতির সত্যতা নিশ্চিত করেন মহানগর মহানগরের প্রচার ও মিডিয়ার দায়িত্বশীল নাঈম আহমদ।