Saturday, March 15, 2025

১২১ বিদ্যালয় বন্ধ রেখে শিক্ষকদের বনভোজন, শিক্ষা অফিসারকে শোকজ

আরও পড়ুন

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার মাত্র একটি বিদ্যালয় ব্যতীত ১২১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রেখে মিলনমেলা ও বনভোজন আয়োজন করেছেন শিক্ষক ও শিক্ষক সমিতির নেতারা। এতে অংশ নেন বিদ্যালয়ের সব শিক্ষক। স্কুল বন্ধ রেখে বনভোজন আয়োজন করায় বিষয়টি নিয়ে অভিভাবক মহলে শুরু হয় তীব্র সমালোচনা।

একপর্যায়ে তাৎক্ষণিক ছুটি বাতিল করে বিদ্যালয় খোলার নির্দেশ দেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার। এছাড়া শিক্ষকদের ছুটি মঞ্জুর করার কারণে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে শোকজ করা হয়েছে। এক দিনের মধ্যে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।

গতকাল সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) চুয়াডাঙ্গা বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা শাখার ব্যানারে আক্কাছ লেক ভিউ পার্ক অ্যান্ড রিসোর্টে এ আয়োজন করা হয়।

অভিভাবকরা বলছেন, চলতি বছর প্রায় শিক্ষার্থী এখনো বই পায়নি। শুক্রবার ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি ছিল। তারপর সোমবার বিদ্যালয় বন্ধ করে বনভোজনের আয়োজন করে শিক্ষকরা। এদিকে মঙ্গলবার সরকারি ছুটি। এমনিতেই শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় পিছিয়ে গেছে। তার ওপর এভাবে ছুটি নিয়ে বনভোজন করা ঠিক হয়নি। অনুষ্ঠানটি যেকোনো ছুটির দিনে করতে পারত।

শিক্ষক সমিতির নেতারা বলছেন, সংরক্ষিত ছুটি নিয়েই তারা আয়োজন করেছেন। পরে ছুটি বাতিল করা হলে সবাই ক্লাসে ফিরে গেছে।

আরও পড়ুনঃ  স্কুলের অনুষ্ঠানে ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ গানে ছাত্রীর নাচ, প্রধান শিক্ষককে শোকজ

এদিকে, কিভাবে ও কেন ছুটি দিয়েছে তা জানতে চুয়াডাঙ্গা উপজেলার শিক্ষা অফিসার লাইলা তাসলিমা নাসরিনের কাছে ব্যাখ্যা তলব করেছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। আজ মঙ্গলবারের মধ্যে তাকে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।

জানা যায়, স্কুল বন্ধ রেখে এই আয়োজন করায় আলোচনার জন্ম হলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, উপজেলা উপজেলা শিক্ষা অফিসার, সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারসহ প্রায় সব কর্মকর্তা কর্মচারী দাওয়াত পেলেও শেষ পর্যন্ত বেশ কয়েকজন যোগ দেননি। তবে পিকনিকের চাঁদা দিয়েও অনেকের ভাগ্যে জোটেনি পিকনিকের রান্না করা খাবার।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে সংরক্ষিত ছুটির আবেদন করা হয়। প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আমাদের ছুটি মঞ্জুর করেন। এরপরই আমরা মিলনমেলা ও বনভোজনের আয়োজন করি। আয়োজন চলাকালীন সময়ে হঠাৎ আমাদের জানানো হয় ছুটি বাতিল করা হয়েছে। এখনি স্কুল খোলার নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার। এরপরই দুপুর ২টার মধ্যে আমরা গুছিয়ে বের হই।

তিনি আরও বলেন, শিক্ষকরা বছরে তিনটি সংরক্ষিত ছুটি পেয়ে থাকেন। সেই ধারাবাহিকতায় আমরা ছুটি পাস করিয়ে আয়োজন করেছিলাম। তবে কয়েকটা বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অংশগ্রহণ না করায় তাদের বিদ্যালয় খোলা ছিল। এ বিষয়টি এখন কেন প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে তা আমার জানা নেই।

আরও পড়ুনঃ  আগ্নেয়াস্ত্রসহ গ্রেপ্তার ১০ ব্যক্তি জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী নন

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন শিক্ষক বলেন, ৮ ফেব্রুয়ারি সদর উপজেলার সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকদের নিয়ে প্রস্তুতি সভা করা হয়। সেখানে বনভোজন ও মিলনমেলার জন্য শিক্ষকদের জনপ্রতি ৫শ’ টাকা চাঁদার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।

সদর উপজেলার আলুকদিয়া ইউনিয়নের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একজন মহিলা শিক্ষিকা ঢাকা পোস্টকে বলেন, সমিতির নেতারা বনভোজনের জন্য ৫০০ টাকা টাকা চাঁদা তুলছেন। বনভোজনে শিক্ষকদের যাওয়ার জন্য কোনো যানবহনের ব্যবস্থা রাখেনি। ১৫ কিলোমিটার পথ নিজ ব্যবস্থায় যেতে হবে। তাই আমার মতো অনেকেই চাঁদা দিয়েও বনভোজনে অংশ নেয়নি।

বনভোজনে অংশ নেওয়া এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আগে কখনোই বিদ্যালয় বন্ধ রেখে এভাবে প্রাথমিক শিক্ষকদের বনভোজন আয়োজন হয়নি। বনভোজনের জন্য প্রত্যেক শিক্ষকের কাছ থেকে বাধ্যতামূলক ৫০০ টাকা করে চাঁদা নেওয়া হয়। কিন্ত আয়োজনে ত্রুটি থাকায় শেষ পর্যন্ত অনেক শিক্ষক খাবার পায়নি বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

আরও পড়ুনঃ  গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দগ্ধ একই পরিবারের তিনজন

এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার লাইলা তাসলিমা নাসরিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, শিক্ষা অফিসারের অনুমতিক্রমে প্রধান শিক্ষকরা বছরে তিন দিন সংরক্ষিত ছুটি নিতে পারেন। শিক্ষক সমিতির যারা আছেন উনারা চাইছিলেন তাদের আয়োজনে পিকনিক করবেন। তাই ১২১টি বিদ্যালয়ের সব শিক্ষক সংরক্ষিত ছুটির জন্য আবেদন করেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে আমি ছুটি দেই।

তিনি আরও বলেন, এর আগে কখনো এমন হয়নি। শিক্ষকরা সংরক্ষিত ছুটি নিয়ে থাকেন। তবে আমার কাছে মনে হয়েছে শিক্ষকদের মধ্যে দুটি গ্রুপিংয়ের কারণে রিপোর্ট হয়েছে৷ আয়োজন চলাকালীন সময়ে ছুটি বাতিল করা হলে সকল শিক্ষকরা তাদের বিদ্যালয়ে যায় এবং ক্লাস শুরু করেন। এ বিষয়ে ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার। আমি ব্যাখ্যা দেব।

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার অহীন্দ্র কুমার মন্ডল ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ছুটি বাতিল করে বিদ্যালয় খোলা হয়েছে। সারাদিন ক্লাসও হয়েছে। ছুটি কিভাবে দিয়েছিলেন, কেন দিয়েছেন তা জানতে সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবারের মধ্যে ব্যাখ্যা জানাতে বলা হয়েছে।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ