Sunday, June 15, 2025

ছাত্রশিবিরের ঈদ উপহার নেওয়ায় মসজিদ খাদেমের ৩ মাসের বেতন কর্তন

আরও পড়ুন

ঢাকা কলেজ জামে মসজিদের খাদেম মো. নিজাম উদ্দিন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে ঈদ উপহার নেওয়ায় তিন মাসের বেতন কর্তন করেছে কলেজ প্রশাসন। ২৭ বছর ধরে তিনি এ মসজিদে খাদেম হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

জানা যায়, কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক নেহাল আহমেদের স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ঢাকা কলেজ অধ্যক্ষ থেকে বিদায় নেওয়ার পর নেহাল আহমেদ দুই বছর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক (ডিজি) ছিলেন। বিতর্কিত এ কর্মকর্তাকে শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগও করতে হয়েছিলো গত বছর।

নেহাল আহমেদ সাবেক রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আব্দুল হামিদের ভাগনে। নিজ অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে মাউশির ডিজি থাকা অবস্থায় প্রায় পুরোটা সময় ঢাকা কলেজ অধ্যক্ষের বাসভবনে পরিবার নিয়ে দখলে রেখেছিলেন। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তীতে নেহাল আহমেদ আত্মগোপনে রয়েছেন।

২০২০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা কলেজ অধ্যক্ষের কার্যালয় থেকে দেওয়া বিতর্কিত সেই অফিস আদেশে বলা হয়, ‘২০২০ সালের ১ আগস্ট শনিবার শেখ কামাল ছাত্রাবাস সন্নিকটে ঢাকা কলেজের ০৩ নং গেইটে সংগঠন/বহিরাগতদের কাছ থেকে উপহারসামগ্রী গ্রহণ করার বিষয়ে ২০২০ সালের ৬ আগস্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে আপনার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হওয়ায় তদন্ত কমিটির সুপারিশের প্রেক্ষিতে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসাবে ০৩ মাসের (সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর ২০২০) বেতন কর্তনের নির্দেশ দেওয়া হলো এবং মসজিদ কমিটি আপনার গতিবিধি ০৬ (ছয়) মাস পর্যবেক্ষণের পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।’

আরও পড়ুনঃ  ঝিনাইদহ জামায়াতে ইসলামীর ৪টি আসনের এমপি পদ প্রার্থীর নাম ঘোষণা

এ ঘটনায় মসজিদের খাদেম মো. নিজাম উদ্দিন কালবেলাকে বলেন, ছাত্রশিবিরের ভাইয়েরা সবসমই আমাদের খোঁজ নেন। মসজিদে আসেন, দেখা হয়। ঈদের সময় উপহার পাঠায়। প্রতি বছরের মতোই ২০২০ সালেও কোরবানির মাংস পৌঁছে দিয়েছিলেন কলেজ কর্মচারীদের ঘরে। কোরবানির দিন আমি এবং মুয়াজ্জিন সাহেবকে ২ পোটলা মাংস দিয়ে যান। এর কিছু দিন পর দেখি-নেহাল স্যারের আদেশে একটা নোটিশ ধরিয়ে দেয় আমাকে। তিন মাসের বেতন কেটে নেয়৷

তিনি বলেন, ছাত্রশিবির থেকে কোরবানির মাংস নেওয়ায় কলেজের আরও কয়েকজন স্টাফকে গালমন্দ করেন নেহাল স্যার। বিচার চেয়ে অনেকের কাছে গিয়েছিলাম। বরং হুমকি এসেছে চাকরিচ্যুতির। এখনও ১০ হাজার করে সেই তিন মাসের ৩০ হাজার টাকা পাইনি।

আরও পড়ুনঃ  বাংলাদেশি যুবককে নির্যাতন, মৃত ভেবে সীমান্তে ফেলে রেখে গেল বিএসএফ

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা কলেজ শাখার সভাপতি মোস্তাকিম আহমেদ বলেন, প্রতিবছরই ঢাকা কলেজ শাখার পক্ষ থেকে কলেজ স্টাফ, শিক্ষার্থী এবং সংশ্লিষ্টদের সম্মানে কোরবানি দেওয়া হয়। আমাদের দায়িত্বশীল ভাইয়েরা পশু কোরবানি পরবর্তী তাদের ঘরে মাংস পৌঁছে দেন। তারই অংশ হিসেবে তৎকালীন দায়িত্বশীল ভাইয়েরা মসজিদের খাদেমের কাছে কোরবানি মাংস পৌঁছে দেয়। ওনার (মসজিদ খাদেম) বেতন কেটে নেওয়ার ঘটনাটি শুনে আমরাও ব্যথিত হয়েছি। এ সময় তিনি দ্রুত সময়ের মধ্যে বর্তমান কলেজ প্রশাসনকে কেটে নেওয়া বেতন ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান।

আরও পড়ুনঃ  এ ধরনের নৃশংস হামলা মেনে নেওয়া যায় না : শিবির সভাপতি

এ বিষয়ে জানাতে চাইলে ঢাকা কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াস বলেন, কোরবানি মাংস নেওয়ায় মসজিদ খাদেমের বেতন কেটে নেওয়া হয়েছে এমন একটা ঘটনা আমিও শুনেছি। কলেজ ঈদের বন্ধে রয়েছে। ক্যাম্পাস খুললে বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব। দেনাপাওনা থাকলে বুঝিয়ে দেওয়া হবে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে ঢাকা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক নেহাল আহমেদকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, বর্তমানে ঢাকা কলেজ জামে মসজিদের খাদেম মো. নিজাম উদ্দিন ১১ হাজার টাকা বেতন পাচ্ছেন।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ