তারা ইতিহাসকে বদলে দিতে পারতেন। নির্মোহভাবে সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করলে নিজেরাও হতে পারতেন মহীয়ান। সেটি তারা করেননি। বরং প্রলুব্ধ হয়েছেন হাসিনার উচ্ছিষ্টের প্রতি। হাসিনার ফ্যাসিজমের যাত্রাপথে দীর্ঘ লাল কার্পেট বিছিয়ে দিয়েছিলেন তারা। মাফিয়াতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথকে করেছিলেন কুসুমাস্তীর্ণ। ‘নির্বাচন’ নামক বিষয়টিকেই পরিণত করেছিলেন তামাশায়। হাসিনার ডিজাইনে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করেছিলেন রক্তের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত নির্বাচনী ব্যবস্থাকে। শুধুমাত্র হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে হাতে ধরে ধ্বংস করা হয় নির্বাচন কমিশন। অবশ্য এর বিনিময়ও পেয়েছেন এর কুশীলবরা। ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যেকে হয়েছেন লাভবান। অর্থ-বিত্তে ফুলে- ফেঁপে ঢোল হন তারা। সুযোগ-সুবিধা, নিরাপত্তা, সেফ এক্সিট,দায়মুক্তিসহ সকল ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন জাতিসংঘ স্বীকৃত গণহত্যাকারী হাসিনা। যারা শেখ হাসিনাকে ‘খুনি হাসিনা’ হওয়ার ভিত্তি-ভূমি রচনা করেছিলেন সেই কুশীলবরা এখনো ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। সরকার হয়তো বাতকা বাত বলছে, হাসিনার মাফিয়াতন্ত্রের সঙ্গে জড়িত কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। প্রত্যেককে বিচারের আওতায় আনা হবে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, নির্বাচন কমিশনে থাকা কুশীলবদের তেমন কাউকেই গত ৬ মাসে আইনের আওতায় আনা হয়নি। গ্রেফতারতো দূরের কথা। এই বিলম্বের মধ্য দিয়ে দেশবাসীর কাছে এই বার্তাই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, অন্তর্বর্তী সরকার তাদের গ্রেফতার এবং বিচারের মুখোমুখি করার প্রশ্নে কালক্ষেপণ করে প্রকারান্তে ‘ছাড়’ দিচ্ছে। তাদের ‘সেফ এক্সিট’র সময় দিচ্ছে। যদিও ৫ আগস্টের পর বিগত চারটি নির্বাচন কমিশনের অনেক কর্মকর্তাই দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। হাসিনা উৎখাতের পরপরই পালিয়েছেন তারা। কুশীলবদের দেশত্যাগে ইমিগ্রেশনে নিষেধাজ্ঞা হয়তো দেয়া আছে। কিন্তু এর মধ্যেই দেশত্যাগ করেছেন অনেকে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, বিগত চার নির্বাচন কমিশনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি),সকল কমিশনার, নির্বাচন কমিশন সচিব এবং গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের ৫ আগস্টের পরপরই গ্রেফতার করা জরুরি ছিলো।
চার নির্বাচন কমিশনের অপরাধ কী ? : সংবিধানের ১১৮ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রতিষ্ঠিত নির্বাচন কমিশন। স্বভাবজাতভাবে এটি স্বাধীন সংস্থা। অনধিক চার সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত হয় কমিশন। রয়েছে নিজস্ব স্বাধীন ‘নির্বাচন কমিশন সচিবালয়’। ‘নির্বাচন কমিশন সচিব’ কমিশনের সাচিবিক দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ সালে আ’লীগ ক্ষমতায় আরোহণ করে সংবিধানের ১১৮(৪) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী স্বতন্ত্র সচিবালয় প্রতিষ্ঠার আইন করে। যার প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিলো স্বাধীন নির্বাচন কমিশনে আমলাতন্ত্রের ক্ষমতাকে সুসংহত করা। ‘নির্বাচন কমিশন আইন’ এবং ‘নির্বাচন কমিশন সচিবালয়’ আইনে নির্বাচনী অপরাধের জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থী, নির্বাচন কমিশনের অধীনস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যক্তিগত অপরাধের জন্য বিভিন্ন ধরনের শাস্তির বিধান রয়েছে। অথচ দু’টো আইনেই অস্পষ্ট রাখা হয়েছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার, কমিশন সদস্য এবং সচিবের অপরাধের শাস্তির বিষয়টি। ২০০৮-২০২৪ সাল পর্যন্ত নির্বাচনগুলোর অভিজ্ঞতা থেকে বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হলেও ইসিকে দায়বদ্ধ করার সুস্পষ্ট বিধান থাকা প্রয়োজন। ২০০৮ সালে ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরপেক্ষ ভূমিকায় না থেকে বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপিকে খন্ড-বিখন্ড করার চেষ্টা, ২০১৪ সালের একতরফা ১০ম সংসদ নির্বাচন, ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘দিনের ভোট রাতে’ এবং সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘আমি-ডামি’র নির্বাচন। চারটি নির্বাচনেই নির্বাচন কমিশনের দায় রয়েছে। কারণ সাংবিধানিকভাবে নির্বাচন কমিশনারগণ মূলত সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান করার শপথ নিয়েছিলেন। কিন্তু নির্বাচনের নামক নাটক মঞ্চস্থ করে হাসিনার ক্ষমতাকে নিরঙ্কুশ করার মধ্য দিয়ে শপথ ভঙ্গ করেছেন তারা। সাংবিধানিক পদে আসীন ব্যক্তিগণ ‘শপথ আইন-১৮৭৩’র আওতায় শপথ গ্রহণ করেন। কিন্তু শপথ ভঙ্গ করলে কি শাস্তি হবে-আইনে সেটি নেই। অর্থাৎ, বিগত চারটি নির্বাচন কমিশন দল ভাঙার চেষ্টা, ভোটারবিহনী নির্বাচন, রাতের ভোট এবং যে ‘ডামি নির্বাচন’ করেছেন এ জন্য তাদের শাস্তির মুখোমুখি করা যাবে না।
সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন,সাংবিধানিক পদে নিযুক্ত ব্যক্তির শপথ গ্রহণের বিষয়টি সংবিধানেই যুক্ত করা হয়েছে। শপথ ভঙ্গ করলে যে পদে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি শপথ নিলেন সেই পদে ‘ডিসকোয়ালিফাইড’ হয়ে যাবেন। তিনি ওই দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। কিন্তু ধরুন,সাংবিধানিক পদধারী কেউ ইতিপূর্বে শপথ ভঙ্গ করেছেন এবং এখন তিনি ওই পদে নেই-এমন ব্যক্তিকে শপথ ভঙ্গের দায়ে শাস্তির আওতায় আনার সুনির্দিষ্ট আইন বা বিধান রয়েছে বলে জানা নেই। নির্বাচন কমিশন আইনেও শপথ ভঙ্গ করলে শাস্তির কোনো বিধান নেই। এটি একটি শূন্যতা। এমন শূন্যতা থাকতে পারে না। বিগত চারটি নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রম পর্যালোচনা করে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উচিৎ শূন্যতা পূরণ করার। এমন একটি আইন করার যাতে, সুষ্ঠু নির্বাচন করতে ব্যর্থ হলে সেটিতে ‘অপরাধ’ হিসেবে সাব্যস্ত করা। সেই অপরাধের বিচার করার। এটি বিগত ইসি’র ক্ষেত্রে হয়তো প্রযোজ্য হবে না। কিন্তু ভবিষ্যতে ইসি যদি কোনো দলবিশেষকে প্রিভেলাইজ দিতে চায় সেটি রোধ করতে পারবে। সিনিয়র এ আইনজীবীর মতে, বিগত চারটি নির্বাচন কমিশনকে শপথ ভঙ্গের দায়ে অভিযুক্ত করা না গেলেও অন্যান্য ফৌজদারি আইনে অভিযুক্ত করার সুযোগ রয়েছে।
বিচার তবে কোন্ আইনে ? : একটি রিটের প্রেক্ষিতে গত ২৭ আগস্ট বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান এবং বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব উল ইসলামের ডিভিশন বেঞ্চ একটি রুল জারি করেছেন। রুলে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এবং নির্বাচন কমিশনারদের (ইসি) নিয়োগ নিয়ে দেশের কোনো আদালতে প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না-মর্মে দায়মুক্তি প্রদান সংক্রান্ত বিধান কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না-এই মর্মে জারি করা হয় এ রুল। রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। রিটের বিষয়ে তিনি তখন জানিয়েছিলেন, নির্বাচন করে বিগত নির্বাচন কমিশনগুলো শপথ ভঙ্গ করেছেন। এর মধ্যে কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশনের বিরুদ্ধে জাতীয় নির্বাচনে গুরুতর অসদাচরণ এবং আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ এনে তা তদন্তে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের দাবিতে প্রেসিডেন্টকে দুই দফা চিঠি দিয়েছিলেন দেশের বিশিষ্টজনেরা। কিন্তু বিতর্কিত তিনটি নির্বাচন পরিচালনাকারী কোনো কমিশনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। জারিকৃত রুলটি চূড়ান্ত হলে ধারণা করা যায়, বিশেষত: বিগত চার নির্বাচন কমিশনকে কিছুটা হলেও জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব।
বিগত চারটি নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিকভাবে অর্পিত দায়িত্ব পালন করেনি। বরং হাসিনার আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে। হাসিনার আকাক্সক্ষার বাস্তবায়নে কমিশনগুলো মানুষের গণতন্ত্রের আকাক্সক্ষাকে নিষ্ঠুরভাবে দমন করে। ভোটাধিকার হরণ করে হাসিনার মাফিয়াতন্ত্রের ভিত্তিকেই মজবুতি দেয়। বলা হচ্ছে, ২০০৮ সালের পর থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত গঠিত নির্বাচন কমিশনগুলোর কথা। ড.এটিএম শামসুল হুদা কমিশন, একেএম নূরুল হুদা কমিশন, কাজী রকিবউদ্দিন কমিশন এবং সর্বশেষ কাজী হাবিবুল আউয়ালের কমিশন। এ চারটি কমিশনই হাসিনাকে ফ্যাসিস্ট এবং দেশকে মাফিয়া স্টেটে পরিণত করার প্রথম অপরাধটি নির্বিঘেœ করেছেন। নূরুল হুদা কমিশনের মধ্যে কমিশনার মাহবুব তালুকদার ছাড়া আর কেউ প্রতিবাদতো করেনই বরং সব কমিশনার হাসিনা তোষণে ছিলেন নিমগ্ন। নির্বাচন কমিশন আইনে কমিশনারদের জবাবদিহিতার স্পষ্ট কোনো বিধান না থাকায় বিদ্যমান অন্য আইনে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা চলছে।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সূত্র জানায়, ড.এটিএম শামসুল হুদা কমিশন থেকে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন পর্যন্ত অর্থ অপচয়, ভোটার তালিকা না হালনাগাদ করা, জাতীয় পরিচয়পত্র প্রস্তুতকরণ, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ক্রয়সহ বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় শত শত কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। তাই দুদক আইনে তাদের গ্রেফতার ও বিচার করা সম্ভব।
২০০৭ সালে ভারত সমর্থিত ওয়ান-ইলেভেন সরকার নিযুক্ত নির্বাচন কমিশনার ছিলেন সাবেক আমলা ড.এটিএম শামসুল হুদা। আওয়ামীলীগের আন্দোলনের মুখে বিচারপতি আব্দুল আজিজকে সরিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেয়া হয় এটিএম শামসুল হুদাকে। তারা ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন করে। এর আগে এ কমিশন ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা প্রণয়ন করে। যদিও এ তালিকা নির্বাচনে কোনো কাজে লাগেনি। পরবর্তীতে সেটি ‘জাতীয় পরিচয়পত্র’ বা ‘এনআইডি’ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ড.এটিএম শামসুল হুদা নেতৃত্বাধীন কমিশনের অন্য সদস্যদের মধ্যে ছিলেন, মোহাম্মদ ছহুল হোসাইন, ব্রি. জে. (অব.) সাখাওয়াত হোসেন। নির্বাচনের আগে এই কমিশন রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপিকে ভাঙার চেষ্টা করে। বিএনপি সরকারের সাবেক অর্থমন্ত্রী এম.সাইফুর রহমান, মান্নান ভুইয়া এবং মেজর (অব.) হাফিজকে দিয়ে এ ভাঙন ধরানোর চেষ্টা চলে। নির্বাচন কমিশনার হিসেবে মেয়াদ শেষে অবশ্য ব্রি: জে: (অব.) সাখাওয়াত হোসেন এ ঘটনার কৈফিয়ৎও দিয়েছেন। একটি বইতে তিনি স্বীকার করেছেন যে, নির্বাচন কমিশন তখন ভুল করেছিল। সেই ভুলের মাশুল আমাদেরকে দিতে হয়েছে। আমার এখনো মনে হয় আমাদের (নির্বাচন কমিশন) বিরুদ্ধে বিএনপি-এর একমাত্র ক্ষোভের কারণ আমাদের ওই অতি উৎসাহী সিদ্ধান্ত। বর্তমান অবস্থায় যত কৈফিয়ৎই দেয়া হোক, বিগত কমিশন সদস্যদের আইনের আওতায় আনা উচিৎ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বিশেষত: তাদের আর্থিক লেনদেনের অস্বচ্ছতার বিষয়টি বিদ্যমান আইনেই দেখা সম্ভব।
এক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০০৮ সালে ড.এটিএম শামসুল হুদা কমিশন নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১শ’ ৬৫ কোটি টাকা ব্যয় করেন। ২০১৪ সালে ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একেএম নূরুল হুদা কমিশন ভোটারবিহীন ও একতরফা নির্বাচনে খরচ করে ২শ’ ৬৫ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কাজী রকিবউদ্দিন কমিশন প্রকল্পের আওতায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ক্রয়ে খরচ করে ৪ হাজার কোটি টাকা। তবে শুধু দিনের ভোট রাতে অনুষ্ঠিত হওয়ার এ নির্বাচন অনুষ্ঠানের খরচ ছিলো ৭শ’ কোটি টাকার বেশি।
২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশনও টাকা ছড়ায় দু’হাতে। এ নির্বাচনে ঝুঁকি অনেক বেশি থাকায় ম্যাজিস্ট্রেট পিছু অতিরিক্ত ভাতা বাবদই খরচ হয় ৫০ হাজার টাকা। ওই নির্বাচনে সারাদেশে ৮শ’৩৮ জনের বেশি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ‘দায়িত্ব পালন’ করেন। এসব অর্থ ব্যয় করা হয় মানুষকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করার কাজে। দুদক এখন এসব আত্মসাৎ ও রাষ্ট্রীয় অর্থ অপচয়ের হিসেব মেলাচ্ছে। এরই মধ্যে ইভিএম ক্রয় বাবদ ৪ হাজার কোটি টাকা অপচয়ের রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করেছে দুদক টিম। তবে বিগত চার নির্বাচনে যারা সিইসি এবং কমিশনার হিসেবে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের কাউকেই অদ্যাবধি পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়নি। কাজী রকিবউদ্দিন কমিশনের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ এবং কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশনের সচিব মো: জাহাঙ্গীর আলমকে শুধু গ্রেফতার করা হয়েছে। অধরা রয়েছেন এটিএম শামসুল হুদা কমিশনের সচিব, একেএম নূরুল হুদা কমিশনের সচিব।
দুদকের অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিগত চারটি নির্বাচন কমিশনে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন তারা কোটি কোটি টাকা তছরুপ করেছেন। হাসিনার শাসনকে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রদানের বিনিময়ে নিজেরাও ব্যক্তিগতভাবে অর্জন করেছেন বহুমাত্রিক সুযোগ-সুবিধা। নামে-বেনামে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। অর্থ পাচার করেছেন বিদেশেও। এসব অপরাধের কারণেই তাদের বিচারের কাঠগড়ায় ওঠানো সম্ভব।
সূত্রটি সূত্রটি দাবি করছে, বিগত চারটি নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মধ্যে মাঠপর্যায়ে যারা ওসি, ডিসি, এসপি, ম্যাজিস্ট্রেট ও রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের আইনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে কাউকে কাউকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। ওএসডি করা হয়েছে কাউকে। কারো বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও পাচারের অনুসন্ধান। নির্বাচন কমিশনে যারা শীর্ষ পদে ছিলেন তাদের দেশত্যাগের ওপর দেয়া হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু বিগত চার কমিশনের অনেক কর্মকর্তাই এখন আর দেশে নেই। হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগেই দেশ ছেড়েছেন কোনো কোনো কর্মকর্তা। ৫ আগস্টের পর পালিয়েছেন অন্তত: ৬ কর্মকর্তা। দেশে যারা রয়েছেন তারা রয়েছেন আত্মগোপনে। দ্রুত গ্রেফতার করা না হলে তারাও মওকা বুঝে দেশ ছাড়বেন-মর্মে আভাস দিচ্ছে সূত্রটি।