গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার ছয় মাস পর (৫ ফেব্রুয়ারি) বুধবার রাতভর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। বুলডোজার দিয়ে ভবনটির একাংশ ভেঙে দেয়া হয়। যেসময় এই ভাঙচুর চলছিল তখন পূর্বনির্ধারিত এক ভার্চুয়াল ভাষণে এর সমালোচনা করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা, যিনি গত পাঁচই অগাস্ট দেশ ত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেন।
তখন শত শত জনতা ভবনটির সামনে জড়ো হয়েছিল। এসময় অনেককেই ভবনের ইট, রড খুলে নিতে দেখা গেছে।এদের মধ্যে কেউ কেউ বলছে, হাসিনা যে অন্যায় করেছে এবং সাধারণ মানুষের অধিকার হরণ করেছে, তার প্রতিবাদে তারা ভবনের এসব অংশ খুলে নিচ্ছে।কেউ কেউ বলছে, দম্ভের পতনের স্মৃতি হিসেবে তারা ইট কেটে নিয়ে যাচ্ছে।
তবে পরদিন বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ স্থানটি থেকে ভেকু ও বুলডোজার সরিয়ে নেয়া হয়েছে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে।
গণঅভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হবার ছয় মাস পর ছাত্র সমাজের উদ্দেশে গেল মঙ্গলবার শেখ হাসিনা ভাষণ দেবেন– এমন খবর আসার পর থেকেই এনিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
শেখ হাসিনা বক্তব্য দিলে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ভবনে ভাঙচুর চালানো হবে উল্লেখ করেও সামাজিক মাধ্যমে নানা পোস্ট দেয়া হয়। তবে ভাষণের আগেই সেখানে ভাঙচুর শুরু হয় এবং আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।
ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে হামলার পরে তা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্টদের বাড়িতে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।ধানমন্ডিতে থাকা শেখ হাসিনার আরেকটি বাসভবন সুধাসদনেও হামলা চালানো হয়। রাতে ঘটনাস্থলে গিয়ে ভবনের দুটি তলায় আগুন জ্বলতে দেখা যায়।খুলনা মহানগরের ময়লাপোতা এলাকায় অবস্থিত ‘শেখ বাড়ি’ নামে পরিচিত একটি স্থাপনাও বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। এটি ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার চাচার বাড়ি।
বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দেয়া হয় কুষ্টিয়ায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের বাড়িও।আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের ভোলার বাসভবনে হামলা ও অগ্নিসংযোগ চালনো হয়।
সেসময় বিশিষ্ট অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট পিনাকী তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন, গতকাল বুধবার বিকেল থেকে নাটকীয়ভাবে বদলে যাওয়া পরিস্থিতিতে আজ মন্ত্রিপরিষদ সভায় দুটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা খুবই জরুরী।
প্রথমত; দেশ ও বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ সরকারের সকল স্থাপনা থেকে ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের প্রতীক শেখ মুজিবের ছবি এবং যেকোনো ধরনের চিহ্ন আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সরিয়ে ফেলতে হবে।
দ্বিতীয়ত; ভুক্তভোগী এবং গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূস সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই এবং র্যাব পরিচালিত গোপন বন্দিশালা পরিদর্শনের অবিচল সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও সেগুলোতে যাওয়ার তারিখ ও সময় ঠিক করে তা আজ প্রেস ব্রিফিংয়ে বলে দিতে হবে।
৬ তারিখের পিনাকী আরো একটি ভিডিও পোস্ট করেছিলেন যার ক্যাপশনে লিখেছিলেন,কাজ চলতেছে মাশাল্লাহ।
আরেকটি ভিডিওতে লিখেছিলেন, চলছে ভাঙ্গাভাঙ্গি।
আরো একটি পোস্ট করেছিলেন পিনাকী। যেখানে বলা হয়, আগামীকাল সারাদিন
ফ্যাসিবাদের চিহ্ন মুছে দিন।
বুলডোজারের ছবি পোস্ট করে লিখেছিলেন, আইস্যা গেছে আরো।
অন্য আরেকটি পোস্টে পিনাকী লিখেন, আমরা কেউ সুধা সদনে আগুন লাগাইতে বলি নাই। এইটা কারা করছে? অতি উৎসাহী হইলে তো ভাই বিপদ। ফায়ার ব্রিগেড সুধা সদনে যান। এইটা রেসিডেন্সিয়াল এরিয়া। দ্রুত ব্যবস্থা নেন। সুধা সদন হাসিনার না। আমি শুনলাম ফায়ার ব্রিগেড যাইতে চাইতেছে না। ভয় পাইয়েন না ফায়ার ব্রিগেডের ভাইয়েরা। যান দ্রুত।
অন্য এক পোস্টে বলেছিলেন, সারা দেশে অবশিষ্ট মুজিবের মুর্তি জয় বাংলা করে দিন। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে মুজিবের একটা বিশাল মূর্তি আছে এখনো। ঐটা আজ রাতে জয় বাংলা করে দেন। ফ্যাসিবাদের সকল চিহ্ন বিলোপের মধ্যেই আছে জুলাই বিপ্লবের সফলতা।
এরমধ্যে ধানমন্ডি ৩২ এ ভাঙ্গাভাঙ্গির মধ্যেই বিশিষ্ট প্রবাসী সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন এর সাথে এক লাইভে যুক্ত হন পিনাকী।যেখানে একে অপরকে ইদ মোবাকর জানান।
আর সেই লাইভ টকশো নিয়েই ইউটিউবে গেল ৫ দিন আগে ভিডিও পোস্ট করে ভারতীয় গণমাধ্যম আজতাক বাংলা।যেখানে ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা হয়, ‘সরকার আর সেনা আমাদের হাতে ‘ বাংলাদেশকে কন্ট্রোল করছে এই হিন্দু ভিলেন
ভিডিওটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে তীব্র প্রতিক্রিয়া।যেখানে নেটিজেনরা দাবি করেন,ভারতীয় গণমাধ্যমগুলা বরাবরই ফ্যাসিবাদের পক্ষে কথা বলে, বাংলাদেশে সহিংসতা উস্কে দিচ্ছে।মূলত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দোসরদের বাঁচাতেই ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো এমন মিথ্যাচার করে যাচ্ছে।
ভিডিওতে দেখা যায় আজ তাক বাংলার উপস্থাপিকা দাবি করছেন, বাংলাদেশে অন্তবর্তী সরকারের আমলে ভারত বিদ্বেষী মনোভাব ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীও দাবি করতে দেখা যায় গণমাধ্যমটিকে।
৩২ এর ভাঙ্গার কথা উল্লেখ করে সাংবাদিক ইলিয়াস ও পিনাকী ভট্টাচার্যকে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসাবে আখ্যা দেওয়া হয়।দুজনকেই চূড়ান্ত ভারত বিদ্বেষী হিসাবে উপস্থাপন করা হয়।আরো দাবি করা হয় তাঁরা দুজনেই (ইলিয়াস-পিনাকী) ৩২ এর হামলার সমর্থনদাতা ও প্রতিনিয়ত নির্দেশ দিয়ে চলেছেন।এর পর ইলিয়াস ও পিনাকী বর্তমান অবস্থানের কথা উল্লেখ করা হয়।