Saturday, April 19, 2025

গৃহকর্মী-যৌনকর্মীদের শ্রমিক স্বীকৃতি দেওয়ার সুপারিশ

আরও পড়ুন

১৫টি মূল বিষয়সহ ৪৩৩টি সুপারিশ করেছে নারীবিষয়ক
সংস্কার কমিশন। শনিবার (১৯ এপ্রিল) বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এই প্রতিবেদন হস্তান্তর করে কমিশন। এ সময় কমিশনের সদস্যরা প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ প্রধান উপদেষ্টার সামনে তুলে ধরেন। সুপারিশগুলোর মধ্যে আছে শ্রম আইনে গৃহকর্মী ও যৌনকর্মীদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান।

এটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে বাস্তবায়ন করা সম্ভব বলে মনে করে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন।

প্রতিবেদনে একই সময়ে বাস্তবায়ন করার মতো শ্রম খাতে অন্যান্য সুপারিশের মধ্যে আছে সব খাতে ৬ মাস বা ২৪ সপ্তাহ পূর্ণ বেতনে প্রসূতি, প্রসব ও দত্তকজনিত ছুটি নিশ্চিত করা। শ্রম আইনে ‘প্রসূতি কল্যাণ’ পরিবর্তন করে ‘প্রসূতি অধিকার’ লেখা এবং গর্ভধারণ থেকে প্রসবোত্তর ছুটিতে থাকাকালীন সময়ে চাকরিচ্যুতি নিষিদ্ধ করাসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা অন্তর্ভুক্ত করা। পাশাপাশি সব খাতে ২ সপ্তাহ পূর্ণ বেতনে পিতৃত্বজনিত ছুটি নিশ্চিত করা।

এ ছাড়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে বাস্তবায়ন করার মতো আরো দুটি শ্রম ও কর্মসংস্থান বিষয়ক সুপারিশ হচ্ছে— অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নারীর কাজের স্বীকৃতি দেওয়া, গণপরিবহন আইনে সহিংসতা ও যৌন হেনস্তা নিরসনে সুনির্দিষ্ট ধারা অন্তর্ভুক্ত করা ও তার প্রয়োগ।

আরও পড়ুনঃ  একাত্তর-চব্বিশে যারা দেশের জন্য জীবন দেন তাদের ইতিহাসটা গৌরবের ডাঃ শফিকুর রহমান

এ ছাড়া পরবর্তী সরকারের মেয়াদে বাস্তবায়নযোগ্য শ্রম ও কর্মসংস্থান বিষয়ক সুপারিশের মধ্যে আছে— সব খাতে নারী ও পুরুষ শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা, যাতে মজুরী বৈষম্য নিরসন হয়। ন্যূনতম মজুরি বৈশ্বিক মানদণ্ডের সঙ্গে মিল রেখে প্রতি বছর পুনর্মূল্যায়ন করা এবং বাঁচার মতো মজুরির জন্য নীতি প্রণয়ন করা।

নারী শ্রমিকদের নিরাপদ অভিবাসনের জন্য বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

এর মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে বাস্তবায়ন করার মতো সুপারিশগুলো হচ্ছে— অভিবাসী নারী শ্রমিক ও প্রত্যাগত নারী শ্রমিকদের জন্য বিদ্যমান অভিবাসন আইন, বিধি ও নীতিতে প্রয়োজনীয় সংশোধন করা— যাতে তাদের সর্বোচ্চ সুরক্ষা, সম্মান ও কল্যাণ নিশ্চিত হয়। অভিবাসী নারী শ্রমিকদের জন্য নিরাপত্তা ও সহায়তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক ও দ্বিপাক্ষিক চুক্তি সম্পাদন ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা, যাতে পরিবীক্ষন ব্যবস্থা জোরদার এবং ত্রৈমাসিক ও বার্ষিক প্রতিবেদন নিশ্চিত হয়।

এছাড়া আছে প্রত্যাগত নারী অভিবাসী শ্রমিকদের পুনঃএকত্রীকরণ ও কর্মসংস্থান সহজ করতে খসড়া পুনঃএকত্রীকরণ নীতি অনুমোদন ও বাস্তবায়ন করার সুপারিশ।

আরও পড়ুনঃ  ১২ লাখ কোরআন শরীফ বিতরণ করবে সৌদি আরব

নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে আকাঙ্ক্ষা হিসেবে বলা হয়েছে— সব খাতে শোভনকাজ ও বাঁচার মতো মজুরীসহ অধিক সংখ্যক নারী অভিবাসনের ব্যবস্থা নেওয়া, যেখানে তারা আন্তর্জাতিক শ্রম ও অভিবাসন আইনের সব সুযোগ-সুবিধা পাবেন এবং তাদের কর্মপরিবেশ ও মর্যাদা বর্তমানের চেয়ে উন্নত হবে।

প্রতিবেদনে সংবিধান আইন ও নারীর অধিকার

সমতা ও সুরক্ষার ভিত্তি, নারীর অগ্রগতির জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা ও জাতীয় সংস্থাসমূহ, নারীর স্বার্থ ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিকেন্দ্রীকরণ ও স্থানীয় পর্যায়ের উন্নয়ন, নারী ও মেয়ে শিশুর জন্য সহিংসতা মুক্ত সমাজ, জনপরিসরে নারীর ভূমিকা: জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে, জন প্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণ, নারীর অগ্রগতির জন্য শিক্ষা, প্রযুক্তি ও দক্ষতাবৃদ্ধি, সব বয়সী নারীর জন্য সুস্বাস্থ্য, অর্থনীতিতে অংশগ্রহণ ও সম্পদের অধিকার, শ্রম ও কর্মসংস্থান, নারী শ্রমিকের নিরাপদ অভিবাসন, দারিদ্র্য কমাতে টেকসই সামাজিক সুরক্ষা গণমাধ্যমে নারীর অংশগ্রহণ, চিত্রায়ন ও প্রকাশ , ক্রীড়া ও সংস্কৃতিতে নারীর অর্ন্তভুক্তি ও বিকাশ এবং দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনে নারী বিষয়ে সুপারিশ করা হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  প্রেম করে বিয়ে করায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে ৪ খণ্ড করল শ্বশুর

প্রতিবেদন বিষয়ে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভিন হক বলেন, আমরা প্রতিবেদনে সব মিলিয়ে ৪৩৩টি সুপারিশ দিয়েছি। আমরা মনে করি, ৪৩৩টির মধ্যে যদি ২০০টিও বাস্তবায়ন হয়, তাহলেও আমরা অনেকটা এগিয়ে যাবো। আমাদের সুপারিশগুলো ৩টি ভাগে করেছি। আমরা মনে করি, এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় করা সম্ভব, দ্বিতীয়ত আমরা মনে করছি, এর পরের যে সরকার আসবে, যেই মেয়াদেই হোক না কেন, সেই সময়ের মধ্যে কী করা যায়– সেটাকে আমরা আলাদা ভাগ করেছি।

আরেকটি ভাগ হচ্ছে, নারী আন্দোলনের যে চিরন্তন আকাঙ্ক্ষা ‘স্বাধীনতা’ এবং সেই স্বাধীনতা পেতে হলে, নারীর যদি সত্যিকারের মুক্তি পেতে হয়, তাহলে আমরা কী করতে চাই, আমাদের আকাঙ্ক্ষা কী , স্বপ্ন কী– সেগুলো তুলে ধরেছি। আমরা জানি, অনেক কিছু নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হবে, আমরা সেই বিতর্ককে স্বাগত জানাই। কারণ আমরা মনে করি, এখন ২০২৫ সাল, হাই টাইম— এগুলো নিয়ে জনপরিসরে আলোচনা হোক, বিতর্ক হোক, জানাজানি হোক, মানুষ জানুক নারী কী চায়, নারীর স্বপ্নটা কী।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ